সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশের ১৪ মাস ৯ দিন অতিবাহিত হলেও চাকরিতে যোগদানে অপেক্ষমাণদের নিয়োগ দিতে গড়িমসি করছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। অদৃশ্য কারণে দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখা হয়েছে নিয়োগ কার্যক্রম। অধিদপ্তরে নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতায় বিসিএস উত্তীর্ণ মেধাবী নন-ক্যাডারগণ, বিশেষ করে যোগদানের অপেক্ষায় থাকা সহকারী কৃষি বিপণন কর্মকর্তা ও সহকারী প্রশিক্ষণ কর্মকর্তারা দিশেহারা এবং হতাশ হয়ে পড়েছেন। কেন এবং কী কারণে এত দীর্ঘ সময় নিয়োগ আটকে আছে তা কেউই বলতে পারছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ ইত্তেফাককে বলেন, নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। তবে দ্রুত নিয়োগের চেষ্টা চলছে। আশা করছি, চাকরিতে যোগদানের অপেক্ষমাণদের স্বল্প সময়ের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হবে।
পিএসসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতার কারণে সরকারের এই মহান উদ্যোগ ও অর্জন এবং সুবিধাগুলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত নিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্নের নির্দেশনা পিএসসি প্রতিপালন করলেও অনেক মন্ত্রণালয় তা করে না, বিশেষ করে নন-ক্যাডারের ক্ষেত্রে। স্বাভাবিকভাবে, ক্যাডার পদে যোগদানের ক্ষেত্রে সুপারিশপ্রাপ্তদের চার-ছয় মাস সময় লাগলেও বিসিএস উত্তীর্ণ মেধাবী নন-ক্যাডারগণ এক্ষেত্রে অবহেলিত এবং নিয়োগ পেতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের ৯-১০ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে।
৩৭তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যেন আগের সব রেকর্ডকেই ছাড়িয়ে গেছে। পিএসসি ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি বিপণন কর্মকর্তা পদে ১১ জন এবং সহকারী প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা পদে ১০ জনসহ মোট ২১ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এক বছর দুই মাস ৯ দিন অতিক্রান্ত হলেও আজ পর্যন্ত তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পিএসসির সুপারিশের প্রায় আড়াই মাস পর কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের অনুকূলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পত্র প্রেরণ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের প্রাক নিয়োগ জীবনবৃত্তান্ত যাচাই তথা ভেরিফিকেশনের পত্র ইস্যু করে। চাকরিতে যোগদানে ইচ্ছুক প্রার্থীরা মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে মহাখালীর সরকারি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করে এক মাসের ভেতর রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে সক্ষম হন।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা পরিস্থিতিতে ভেরিফিকেশনে কিছুটা বিলম্ব হলেও এই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ভেতর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। নিয়োগের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার পরেও তিন মাসের অধিক সময় ধরে কোনো এক অজানা কারণে চাকরিতে যোগদানে ইচ্ছুক প্রার্থীদের নিয়োগ আটকে আছে। নিয়োগবঞ্চিত প্রার্থীদের এক জন জানান, পরিবারের হাল ধরার বদলে তারা এখন উলটো পরিবারের বোঝা হয়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
আরেক জন বলেন, নিজেদের এলাকায় লজ্জায় তারা মুখ দেখাতে পারেন না, কারণ নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতার দরুন এলাকার অনেকেই এখন তাদের চাকরি পাবার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে বিদ্রুপ করছে। অপর এক প্রার্থী জানান যে, নিয়োগের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার পর তাদের কয়েক জন দ্রুত নিয়োগ প্রজ্ঞাপন হয়ে যাবে ভেবে আগের চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন। এখন না তারা পারছেন আগের চাকরিতে ফিরে যেতে না পারছেন নতুন চাকরিতে যোগদান করতে।