অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েই দেশ থেকে ভয়ানক দুঃসংবাদ পেয়েছিলেন ভারতের নবীন পেস তারকা মোহম্মদ সিরাজ। তার বাবা পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। সিরাজের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার নেপথ্যে অটোচালক বাবার বড় ভূমিকা ছিল। বাবাই ছিলেন সিরাজের বড় অনুপ্রেরণা। তবে দেশে ফিরে বাবাকে শ্রদ্ধা জানানোর থেকে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ভারতের জার্সি পরে বাবার লড়াইকে সম্মান জানাতে চাওয়া সিরাজ মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) গড়লেন অনন্য রেকর্ড। প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে অভিষেক ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ৫ উইকেট নেওয়ার তালিকায় ঢুকে পড়লেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার পেসার লাসিথ মালিঙ্গা ২০০৪ সালে অভিষেক ম্যাচ খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেই ম্যাচে ২ ইনিংস মিলিয়ে তিনি নেন ৬ উইকেট। সিরাজ নিলেন ৫টি। প্রথম ইনিংসে তিনি ফিরিয়েছিলেন মার্নাস লাবুশানে এবং ক্যামরন গ্রিনকে। দ্বিতীয় ইনিংসে সিরাজের শিকার ট্রাভিস হেড, গ্রিন এবং নাথান লায়ন। অজি স্পিনার লায়নের উইকেট নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সিরাজ ঢুকে পড়লেন মালিঙ্গাদের এই তালিকায়।
শেষ ৫০ বছরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অভিষেক হওয়া বোলারদের মধ্যে মাত্র ৪ জন ৫ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন। ১৯৮৬-৮৬ সালে ইংল্যান্ডের ফিলিপ ডেফ্রিটাস এবং ১৯৯৮-৯৯ সালে ইংল্যান্ডের আরেক পেসার অ্যালেক্স টুডোর এই কীর্তি গড়েছিলেন।
সিরাজের কৃতিত্ব আরো বেশি কারণ মেলবোর্নে দ্বিতীয় ইনিংসে উমেশ যাদব মাত্র ৩.৩ ওভার করে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন চোটের কারণে। ভারতের পেস অ্যাটাকের দায়িত্ব এসে পড়ে বুমরা এবং অভিষিক্ত সিরাজের ওপর। সেই দায়িত্ব নিপুণভাবে পালন করলেন তিনি। মূলত বুমরা-সিরাজের কল্যানে জয়ের পথ সহজ হয়ে যায় ভারতের। অটোচালক বাবা আজ নেই, তবে তার সেই পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। ভারতের জার্সিতে আভিষেক হয়েছে সিরাজের। অভিষেকেই ৫ উইকেট নিয়ে ভারতের জয়ে সামনে থেকে অবদান রেখেছেন।
বাবা-মায়ের সঙ্গে ভারতের তরুণ পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত
হায়দরাবাদের দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসে সিরাজ যে ক্রিকেটার হবেন, সেটাই বিশ্বাস করতে পারতেন না পরিবারের সদস্যেরা। শুধু তাঁর বাবা মোহাম্মদ গাউস ছেলের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে দিনরাত পরিশ্রম করে যেতেন। অটোচালক বাবা ভাবতেন, আরো কয়েকটা অতিরিক্ত ভাড়া যদি খাটতে পারি, ছেলেটাকে ভাল করে ক্রিকেট খেলাতে পারব।
টেনিস বলের ক্রিকেটে একাধিক ম্যাচ জেতানোর খবর পেয়ে সিরাজের বাবা তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেন স্থানীয় কোচিং ক্যাম্পে। অর্থাভাবে সেই কোচিং সেন্টারের খরচ চালানোও সম্ভব হত না। কিন্তু ছোটবেলার কোচ কে. সাইবাবা খুদে সিরাজের প্রতিভা দেখে বিনামূল্যে তাকে প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়ে যান। সে দিন থেকেই শুরু হয় সিরাজের যাত্রা। যা আজ স্বীকৃতি পেল মেলবোর্নে।
অনূর্ধ্ব-১৯ প্রতিযোগিতায় নামার আগে জুতো ছিল না সিরাজের কাছে। অটোচালক বাবা সারা রাত ধরে অটো চালিয়ে প্রথম জুতো কিনে দেন সিরাজকে। সেই জুতো পরে পাঁচ উইকেট নিয়ে বাবার পরিশ্রমকে যথার্থ সম্মান জানান সিরাজ। বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে দেশে ফিরে আসার সুযোগও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তরুণ পেসার। ভারতের টেস্ট ক্যাপ পরেই সম্মান জানাতে চেয়েছিলেন বাবার লড়াইকে।