পাবনার চাটমোহর পৌরসভার নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। এদিকে ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নারী ভোটারকে লাঞ্ছিতের অভিযোগও উঠেছে। অবশ্য নির্বাচন কর্মকর্তারা এ ধরণের কোন অভিযোগ পাননি বলে দাবি করেছেন।প্রথম ধাপে সোমবার সকাল আটটার থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পাবনার চাটমোহর পৌরসভার নির্বাচন। ভোটগ্রহণ চলছে ইভিএমে। পৌরসভার ৯টি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। বিকেল চারটা এই ভোট গ্রহণ চলবে।
চাটমোহর সরকারি কলেজ, আফ্রাতপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডাকবাংলো কেন্দ্র, চাটমোহর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, উপজেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয় কেন্দ্র, চাটমোহর আরসিএন এন্ড বিএসএন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রেই বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী প্রফেসর আব্দুল মান্নান ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম দুলাল মির্জার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন।
সকাল সোয়া নয়টার সময়ে চাটমোহর সবুজ সংঘ মাঠের সামনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী প্রফেসর আব্দুল মান্নান তাৎক্ষণিক সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। জোরপূর্বক ভোট কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ইভিএম মেশিনে ফিঙ্গার নিয়েই ভোটারদের বের করে দেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার নিরাপত্তার কারণেই আমি ভোট থেকে সড়ে এসেছি। আমি আনুষ্ঠানিক ভাবে সাংবাদিকদের মাধ্যমে ভোট বর্জন করলাম। লিখিত ভাবে বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবো বলে জানান।’
এদিকে সকাল ১০ টায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম দুলাল মির্জা মধ্যশালিকা নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের চাটমোহরে নিয়ে আসা হয়েছে। তারা ভোটারদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে ত্রাস সৃষ্টি করছে।’ তিনি বলেন, ‘ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে অবশ্যই আমি নির্বাচনে বিজয়ী শতভাগ ছিলাম।’
দুই জন নারী ভোটার বলেন, ‘ভোট কেন্দ্রে ভোট ভোট দেয়ার জন্য গেলেও আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থীর সন্ত্রাসী বাহিনীরা আমাদের ভোট দিতে বাঁধা দিয়েছে। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজসহ থুথু নিক্ষেপ করেছে। আমরা ভোট দিলে আমাদের পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর কয়েকজন এজেন্ট বলেন, ‘সকাল থেকেই আমাদের বেশ কয়েকজনকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এজেন্টসহ নেতাকর্মিরা বের করে দিয়েছেন ভোট কেন্দ্র থেকে। তাদের কথা না শুনলেই শারিরীক নির্যাতন শুরু করে। ‘
কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বলেন, ‘আমরা যেখানেই সামান্য খারাপ কিছু শুনছি, তাৎক্ষণিক ভাবে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করছি। যে কোন ধরণের অস্থিতিশীল পরিবেশ রোধে পুলিশ প্রশাসনসহ বিজিবি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।’
জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কোন প্রার্থীর পক্ষ থেকে এ ধরণের কোন অভিযোগ পাইনি। তারপরও ভোট কেন্দ্রগুলো ঘুরে শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমনটি দেখেছি। বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত কোথায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি এমনটি দাবী করেন এই নির্বাচন কর্মকর্তা।’
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ কাজ করছে। যে কোন ধরণের নাশকতা প্রতিহত করা হবে।’ এখন পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে এমন দাবি তার।
তথ্যমতে, চাটমোহর পৌরসভায় মোট ১২ হাজার ২৩৭ জন ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন। মেয়র পদে চারজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য দুই প্লাটুন বিজিবি, ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ পর্যাপ্ত র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্য ভোটের মাঠের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।