বরাদ্দ পাওয়া সরকারি বাসায় না থাকলে বাড়িভাড়া না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘যাদের নামে সরকারি বাসা বরাদ্দ হবে, তাদের সেই বাসাতেই থাকতে হবে।’ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেনগতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয় প্রকল্পটি।
একনেক শেষে এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম জানান, অনেক বিদ্যালয় বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সরকারি কোয়ার্টারে অনেক সময় কর্মকর্তা বা শিক্ষকরা থাকেন না। ফলে এসব দিনের পর দিন খালি থাকছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের না থাকার কারণ হচ্ছে বেতন বেশি হওয়ায় বাড়ি ভাড়ার ভাতাও বেড়েছে। সরকারি কোয়ার্টারে যে ভাড়া কাটা হয়, তার চেয়ে কম দামে তারা বাইরে ভাড়া বাসায় থাকেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দিয়েছেন।
আসাদুল ইসলাম আরও জানান, বাড়ি ভাড়ার ‘রেট সিডিউল’ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অবশ্যই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্বশাসিত হলেও তাদের জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরির নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যত্রতত্র বিল্ডিং করতে না পারে।
পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে মান নিশ্চিতের নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক উপজেলার জন্য মাস্টারপ্ল্যান এবং যেখানে জলাশয়ের পানি প্রাপ্তি সম্ভব সেখানে সেই পানি ব্যবহার করতেও বলেছেন, বলেও জানান পরিকল্পনা বিভাগের এই সিনিয়র সচিব।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে সচিব বলেন, ‘সরকারি বেতন বৃদ্ধির ফলে এখন যে হাউজ রেন্ট (বাড়িভাড়া) পাওয়া যায়, সেটার চেয়ে কম পয়সায় বাইরে বাসাভাড়া পাওয়া যায়। এজন্য বাসাগুলো তৈরি থাকে, অব্যবহৃত থাকে এবং নষ্ট হয়। ফলে একটা নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন যে, যাদের নামে বাসা বরাদ্দ হবে তাদের থাকতেই হবে। যদি না থাকেন তাহলে তারা বাড়িভাড়া বাবদ ভাতা পাবেন না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
একনেকে গতকাল অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘নরসিংদী জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প; ‘খুলনা শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প ও ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি’ প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘প্রিপেইড গ্যাসমিটার স্থাপন (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা সচিব বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩০টি জেলার মোট ৯৮টি উপজেলায় বসবাসকারী প্রায় সাড়ে ৪ মিলিয়ন বা ৪০ লাখ লোক তাদের বাসভবনে নিরাপদে পরিচালিত ওয়াশ সুবিধা পাবেন। আরও প্রায় ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ লোক বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকসহ জনসমাগমপূর্ণ স্থানে নিরাপদে পরিচালিত স্যানিটেশন সুবিধাগুলি পাবেন। এছাড়া প্রায় ২৫ লাখ লোক কাউন্টার পার্টের (পিকেএসএফ) তহবিলের মাধ্যমে নিরাপদে পরিচালিত ওয়াশ সুবিধাগুলি পাবেন।’
অনুমোদিত প্রকল্প- রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প; প্রথম সংশোধনের মাধ্যমে এর ব্যয় ২৫৯ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। সংশোধনীর মধ্য দিয়ে প্রকল্পটির মোট ব্যয় হচ্ছে ৫৯৯ কোটি টাকা। নরসিংদী জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৫ কোটি টাকা, খুলনা জেলার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পটি প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ১১৭ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৯৬ কোটি টকা।
এছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটিতে বিশ্বব্যাংক ও এআইআইবি থেকে ১ হাজার ৮৩২ কোটি টাকার ঋণ পাওয়া যাবে। প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন প্রকল্পটি দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধন করা হয়েছে। এবার প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ২৫৫ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রকল্পটির মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৭৫৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ৬৫১ কোটি টাকা।