বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে শিরোপা জিতল জেমকন খুলনা

খেলাধুলা

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে শিরোপা জয় করেছে তারকা সমৃদ্ধ দল জেমকন খুলনা। ফাইনাল ম্যাচে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে ৫ রানে হারিয়ে শিরোপ জয় করে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দলটি। ফাইনাল ম্যাচে টস হেরে খুলনা আগে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে বড় টার্গেট দিতে না পারলেও শেষ ওভারে শহিদুলের বোলিং চমকে ৫ রানে জয় পায় খুলনা। গতকাল মিরপুর স্টেডিয়ামে খুলনা আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে করে ১৫৫ রান। ফলে জয়ের জন্য ১৫৬ রানের টার্গেট পায় চট্টগ্রাম। ফাইনাল ম্যাচে টার্গেটটা কিন্তু খুব বড় ছিল না। কিন্তু ব্যাট করতে নেমে চট্টগ্রাম ৬ উইকেটে ১৫০ রানে আটকে গেলে ৫ রানে জিতে শিরোপা জয় করে খুলনা। ব্যাটিংয়ে মাহমুদুল্লাহ আর বোলিংয়ে শহিদুলই দলকে শিরোপা এনে দেন। খুলনার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন। ফাইনাল ম্যাচে মাত্র ১৫৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিল ওপেনার লিটন দাস আর সৌম্য সরকার। তবে দলীয় ২৬ রানে সৌম্য সরকারের বিদায়ে ভাংগে ওপেনিং জুটি। ১২ রান করা সৌম্য সরকারকে বোল্ড করে ফিরান শুভাগত হোম। ১০ বলে ১২ রান করা সৌম্য একটি ছক্কাও মারেন। সৌম্যর বিদায়ে ব্যাট করতে নেমে ভালো করতে পারেননি অধিনায়ক মোহাম্মদ মিথুন। মাত্র ৭ রানে আল আমিনের বলে এলবি আউট হয়ে ফিরলে চট্টগ্রাম ৩৫ রানে হারায় দ্বিতীয় উইকেট। তবে প্রথম থেকে রান তোলা ওপেনার লিটন দাস দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও তাকে থামতে হয় ৫১ রানে। রান আউটের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেয়ার আগে ২৩ বলে ২টি চারে ২৩ রান করেন লিটন। লিটনের বিদায়ে সৈকত আলী-শামসুর রহমান চতুর্থ উইকেটে জুটি করে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যায়। এই জুটি ভাংগার আগেই চট্টগ্রাম পৌঁছে যায় ৯৬ রানে। শতরান থেকে মাত্র ৪ রান দূরে। শামসুর রহমানের বিদায়ে ভাংগে এই সফল জুটি। হাসান মাহমুদের বলে শুভাগতকে ক্যাচ দেয়ার আগে শামসুর করেন ২৩ রান। ২১ বলে তিন চারে সাজানো ছিল তার ২৩ রানের ইনিংস। ১৫ ওভার শেষে দলটির সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ৯৯ রান। জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে দলটির দরকার ছিল ২৯ রান। তবে ব্যাটিংয়ে সৈকত আলী আর মোসাদ্দেক হোসেন থাকায় জয়ের স্বপ্ন ছিল দলটির সামনে। অবশ্য হাতে উইকেট থাকার পরও চট্টগ্রাম আগে রান রেটটা বাড়িয়ে রাখেনি। ফলে শেষেরদিকে চাপে পড়ে মিথুনের দলটি। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৬ রানের দরকার ছিল চট্টগ্রামের। শহিদুল ইসলামের শেষ ওভারে মোসাদ্দেক আর সৈকত আলীকে হারালে জয় থেকে ছিটকে যায় চট্টগ্রাম। ওভারের তৃতীয় আর চতুর্থ বলে দুটি পরপর গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন শহিদুল। ফলে শহিদুলের শেষ ওভারে বোলিং চমকে ১৫০ রানে আটকে যায় চট্টগ্রাম। আর খুলনা জয় পায় ৫ রানে। সৈকত আলী ৫৩ রানে আর মোসাদ্দেক আউট হন ১৯ রানে। খুলনার পক্ষে শহিদুর নেন ২ উইকেট। এর আগে ফাইনাল ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন চট্টগ্রামের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন। আর আগে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের উপর ভর করে ৭ উইকেটে ১৫৫ রান করে খুলনা। পাঁচ নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে ৪৮ বলে অপরাজিত ৭০ রানের দারুন এক ইনিংস খেলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল খুলনা। দলীয় পঞ্চাশের আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পরে খুলনা। তবে দলের কঠিন সময়ে প্রতিরোধ গড়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার অপরাজিত ৭০ রানে খুলনা পেয়েছে ১৫৫ রানের লড়াকু সংগ্রহ। আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারায় খুলনা। প্রথম বলেই খুলনার ওপেনার জহিরুল ইসলামকে ফিরিয়ে চট্টগ্রামকে দারুন সূচনা এনে দেন নাহিদুল। মিড-অফে মোসাদ্দেক হোসেনকে ক্যাচ দেন জহিরুল। এখানেই ক্ষান্ত হননি নাহিদুল। নিজের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে আবারো খুলনা শিবিরে আঘাত হানেন তিনি। তিন নম্বরে নামা ইমরুল কায়েসকে ৮ রানের বেশি করতে দেননি নাহিদুল। ছক্কা মারতে গিয়ে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দেন ইমরুল। ফলে ২১ রান তুলতেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে খুলনা। চাপ থেকে দলকে চিন্তা মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন ওপেনার জাকির হাসান ও চার নম্বরে সাকিব আল হাসানের পরিবর্তে নামা আরিফুল হক। জুটিতে ২২ রান আসার পর তাদের বিচ্ছিন্ন করেন স্পিনার মোসাদ্দেক। ২০ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৫ রান করা জাকিরকে শিকার করেন মোসাদ্দেক। দলীয় ৪৩ রানে জাকিরের বিদায়ের পর ক্রিজে আরিফুলের সঙ্গী হন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়ে দলের রানের চাকা ঘুড়াতে থাকেন তারা। ১১ ওভার শেষে ৭৭ রান পেয়েও যায় খুলনা। ১২তম ওভারে আরিফুলকে শিকার করে চট্টগ্রামকে খেলায় ফেরানোর পথ দেখান বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। উইকেটে পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ২১ রানে থামেন আরিফুল। ২৩ বল খেলে ২টি চার মারেন তিনি। দলের স্কোর যখন ৮৩ রানে, তখন আউট হন আরিফুল। এরপর শুভাগত হোমের সাথে ৩৪ রানের জুটি গড়ে দলকে ভালো অবস্থায় নিয়ে যান মাহমুদুল্লাহ। জুটিতে ১৫ রান অবদান রেখে শরিফেুলের বলে ফিরেন শুভাগত। তার ১২ বলের ইনিংসে ১টি করে চার ও ছক্কা ছিলো। শুভাগত আউট হবার পর খুলনার ইনিংসে ২৬ বল বাকী ছিলো। এক প্রান্ত দিয়ে শামিম হোসেন শুন্য ও মাশরাফি বিন মর্তুজা ৫ রান করে থামলেও, অন্য প্রান্ত আগলে রেখে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মাহমুদুল্লাহ। মোস্তাফিজুর রহমানকে বাউন্ডারি মেরে এবারের আসরে প্রথম অর্ধশতকের দেখা পান তিনি। ফাইনালের মঞ্চে মাহমুদুল্লাহর এই হাফ-সেঞ্চুরি শেষ পর্যন্ত খুলনাকে লড়াকু সংগ্রহই এনে দেয়। সৌম্যর করা শেষ ওভারের তৃতীয় বলে চার, চতুর্থ বলে ছক্কা ও পঞ্চম বলে চার মারেন মাহমুদুল্লাহ। ঐ ওভারে আসে ১৭ রান। ফলে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৫ রান করে খুলনা। ৪৮ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ৭০ রান করেন খুলনার দলনেতা মাহমুদুল্লাহ। চট্টগ্রামের নাহিদুল-শরিফুল ২টি করে এবং মোসাদ্দেক-মোস্তাফিজ ১টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
জেমকন খুলনা —–১৫৫/৭ (২০ ওভার)
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম—১৫০/৬ (২০ ওভার)
খুলনা ৫ রানে জয়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *