চিড়িয়াখানা খুলছে আজ, প্রবেশ ফ্রি!

বাংলাদেশ

দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব কমায় সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ রোববার (১ নভেম্বর) থেকে খোলা হচ্ছে জাতীয় চিড়িয়াখানা। আজ থেকে প্রকৃতির নতুন সাজে রূপ নেয়া চিড়িয়াখানায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘুরতে পারবেন দর্শনার্থীরা।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে মানুষের আনাগোনা না থাকায় বদলে যায় চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরীণ অনেক চিত্র। এরই মধ্যে চিড়িয়াখানায় বেড়েছে সবুজের সমারোহ। বেড়েছে প্রাণীর সংখ্যাও।

এদিকে সরকারের নানামুখী প্রচারণায় দেশের মানুষ আগের চেয়ে স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সম্পর্কে প্রায় মানুষই যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করেছেন। এতে লকডাউনসহ নানা বিধি-নিষেধ তুলে নেয়া হয়েছে। মানুষও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আচমকা বাধাপ্রাপ্ত অর্থনীতি ফের চাঙ্গা হয়েছে।

অপরদিকে মানুষও লকডাউনে থেকে বিরক্তবোধ করছিলেন। সেই বিরক্তবোধ করা মানুষদের বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিতে শর্তসাপেক্ষে জাতীয় চিড়িয়াখানা আজ থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে।

১০ পদক্ষেপের শর্তে খুলছে জাতীয় চিড়িয়াখানা

১. চিড়িয়াখানায় প্রবেশের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে অমোচনীয় রঙ দিয়ে বৃত্তাকার স্থান চিহ্নিত করা। ২. প্রবেশ ফটকে জীবাণুনাশক টানেল ও ফুটবাথ স্থাপন করা। ৩. প্রবেশ পথে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা। ৪. চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও সাবান রাখা। ৫. দর্শনার্থীদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা। ৬. দর্শনার্থীর সংখ্যা প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। ৭. প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ প্রাণীর পরিবেষ্টনের চারপাশে জীবাণুনাশক স্প্রে করা। ৮. চিড়িয়াখানা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখা। ৯. ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সতর্কতামূলক প্রচারণা চালানো। ১০. ষাটোর্ধ্ব বয়সী কাউকে চিড়িয়াখানায় প্রবেশাধিকার না দেয়া।

মাসের প্রথম রোববার জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রবেশ ফ্রি

দীর্ঘ আট মাস বন্ধ থাকার পর খুলছে দেশের বিনোদনের অন্যতম জনপ্রিয় কেন্দ্র বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা। বিনোদন পিপাসু মানুষকে স্বস্তি দিতেই রোববার (১ নভেম্বর) থেকে চিড়িয়াখানা খুলে দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে খুশির খবর জানিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসের প্রথম রোববার অর্থাৎ আজ চিড়িয়াখানায় বিনামূল্যে প্রবেশ করা যাবে।

চিড়িয়াখানায় নতুন যা দেখতে পারবেন

আট মাস দর্শনার্থীদের ভিড় না থাকায় চিড়িয়াখানার প্রাণীকূলের মধ্যে নতুন প্রজন্মের সংখ্যা বেড়েছে। চিড়িয়াখানায় বেশ কিছু নতুন অতিথি দেখবেন দর্শনার্থীরা।

চিড়িয়াখানার তথ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়ালিউর রহমান জানান, করোনা প্রার্দুভাবের সময় চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকার সময় জন্ম নিয়েছে ৯৮টি প্রাণী। ইমু পাখি নতুন ১২টি বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। ময়ূরের সংসারেও এসেছে নতুন অতিথি। ২৩টি ময়ূর ছানা জন্ম নিয়েছে। এছাড়া ওয়াইল্ড বিস্ট, গাধা, জিরাফের ঘরেও এসেছে একটি করে নতুন অতিথি।

শুধু তাই নয়, লকডাউনের শুরুতেই একটি জিরাফের জন্ম হয়। সদ্যোজাত জিরাফের বাচ্চার নাম দেয়া হয়েছে দুর্জয়। সবচেয়ে বেশি নতুন অতিথি এসেছে হরিণের সংসারে। মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ১৫টি হরিণের বাচ্চা জন্মেছে। এছাড়া গত পাঁচ মাসে একটি ইম্পালা, একটি গাধা, ৩০টি বক, পাঁচটি ঘুঘু ও ১০টি কবুতর জন্ম নিয়েছে।

নতুন পরিকল্পনায় প্রাণীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা

প্রাণীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে করা হয়েছে নতুন পরিকল্পনা। চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা জানান, পশুপাখির শেডের সাইড দিয়ে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে শেডের সাইড দিয়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হবে। প্রতিটি খাঁচার সামনে কেয়ারটেকার থাকবে। তারাই দর্শনার্থী ও খাঁচার প্রাণীদের মধ্যকার দূরত্ব নির্ধারণ করে দেবে। তবে দর্শনার্থীরা খাঁচার প্রাণীদের খাবার দিতে পারবেন না

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *