বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে লিগ পর্বের খেলায় ব্যর্থতার মিছিলে ছিলেন লিটন দাসও। চার ইনিংসে তার সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ২৭ রান। সেই লিটনই ফাইনালে খেলেছেন ৬৮ রানের নান্দনিক ইনিংস। বোলিংয়ে সুমন খান, ব্যাটিংয়ে লিটন কুমার দাসের ছন্দে নাজমুল একাদশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো মাহমুদুল্লাহ একাদশ। অথচ লিগের খেলায় মাহমুদুল্লাহর দলকে দু’বার হারিয়েছেন নাজমুলরা। চার ম্যাচের তিনটিতে জিতে টেবিলের শীর্ষেও ছিলেন তারা।
লিগ পর্বের মতো ফাইনাল ম্যাচটিও ছিল লো-স্কোরিং। নাজমুল একাদশকে ১৭৩ রানে বেঁধে ফেলে ১২২ বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নেয় মাহমুদুল্লাহ বাহিনী। ফাইনাল ম্যাচটি শুক্রবার হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দু’দিন পিছিয়ে অনুষ্ঠিত হয় রোববার। বৃষ্টির কারণে তিন দিন উইকেটের পরিচর্যা করা সম্ভব হয়নি। কাভারের নিচে থাকায় ময়েশ্চার জমে ছিল পিচে। আর্দ্র উইকেট থেকে ভালো সুবিধা পান পেসাররা। প্রথমে ব্যাট করা দলের জন্য রান করা কঠিন হয়ে পড়ে।
টস জিতে কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগাতে ফিল্ডিং নেন মাহমুদুল্লাহ। রুবেল-সুমন-এবাদত পেসার ত্রয়ী নিয়মিত বিরতিতে উইকেট ভেঙে জুটি গড়ে তুলতে দেননি নাজমুল একাদশকে। সাইফ, সৌম্য, মুশফিক, আফিফরা রান পাননি। অধিনায়ক নাজমুল, তৌহিদ ও ইরফান কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলায় রক্ষা। নাজমুল ৫৭ বলে ৩২, তৌহিদ ৫৩ বলে ২৬ রান করেন। স্রোতের বিপরীতে একা লড়ে ৮টি চার ও দুই ছক্কায় ৭৭ বলে ৭৫ রান করেন ইরফান। দল হারলেও ফাইনালের সেরা ব্যাটসম্যানের পুরস্কার দেওয়া হয় তাকে।
সিরিজজুড়েই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন রুবেল হোসেন। পাঁচ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা বোলার হন তিনি। ফাইনালে দুই উইকেট পেলেও ইকোনমি রেখেছেন ৩.৩৮। সুমন ১০ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিলে ফাইনালের সেরা বোলিং ও ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে নেন। মূলত এই ২০ বছরের তরুণই নাজমুল একাদশের ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামান। সিরিজে তিন ম্যাচ খেলে ৯ উইকেট শিকার তার। পাঁচ উইকেট পাওয়া একমাত্র বোলার তিনি। এবাদতও শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে দারুণ ছন্দ দেখান। ৮ ওভার এক বল করে ইকোনমি রেখেছেন ২.২০।
লক্ষ্য ছোট হওয়ায় মাহমুদুল্লাহ একাদশের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন চাপহীন। ওপেনিং ব্যাটসম্যান লিটন কুমার সেট হয়ে বোলারদের কাজ কঠিন করে তোলেন। ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ৬৩ রানের জুটি গড়েন তিনি। ম্যাচ শেষ করেন ইমরুল-মাহমুদুল্লাহ। ছন্দে থাকলে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন লিটন দেখালেন ফাইনালে। নিজের ৬৮ রানে ৪০ যোগ করেছেন বাউন্ডারি থেকে। ১০টি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। মিডল অর্ডারে নেমে ৫৫ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত ইমরুল ছক্কা হাঁকান ছয়টি। মাহমুদুল্লাহ ১১ বলে করেন ২৩ রান। চ্যাম্পিয়ন দলের ব্যাটসম্যানদের তোপের মুখে পড়ে মার খেয়েছেন নাজমুল একাদশের বোলাররা। চেষ্টা করেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি তাসকিন, আল-আমিনরা। ফলে একপেশে খেলে ম্যাচ জিতে নেয় মাহমুদুল্লাহ একাদশ।
সিরিজটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে মোটা আর্থিক পুরস্কার রেখেছিল বিসিবি। প্রতিটি ম্যাচে দেওয়া হয়েছে চারটি করে ব্যক্তিগত পুরস্কার। ম্যাচসেরার জন্য ৫০ হাজার, সেরা ব্যাটসম্যান, সেরা বোলার ও সেরা ফিল্ডারকে দেওয়া হতো ২৫ হাজার করে টাকা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়কে দুই লাখ, সেরা ব্যাটসম্যান, বোলার, ফিল্ডারের সঙ্গে নতুন করে কিছু পুরস্কার যোগ করা হয়। ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করতেই বিসিবির এ উদ্যোগ। দলগত পুরস্কার হিসেবে চ্যাম্পিয়নরা ১৫ লাখ আর রানার্সআপ দলকে সাড়ে সাত লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।