কবির সুমনের ইচ্ছাপত্র : মৃত্যুর পর সব সৃষ্টি ধ্বংসের নির্দেশ

বিনোদন

কলকাতার নন্দিত গীতিকার, সুরকার, গায়ক ও সংগীত পরিচালক কবির সুমন গতকাল শুক্রবার ফেসবুকে একটি ইচ্ছাপত্র প্রকাশ করেছেন। ব্যক্তিগত প্যাডে লেখা ওই ইচ্ছাপত্রে কিংবদন্তি এই শিল্পী তাঁর মৃত্যুর পর সমস্ত সৃষ্টি ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন।

‘সকলের অবগতির জন্য’ শিরোনামে স্বহস্তে লেখা সেই ইচ্ছাপত্রে কবির সুমন লিখেছেন, ‘সচেতন অবস্থায়, স্বাধীন ভাবনাচিন্তায় ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমি জানাচ্ছি, আমার কোনো অসুখ করলে, আমায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে অথবা আমি মারা গেলে আমার সম্পর্কিত সবকিছুর, প্রতিটি বিষয় ও ক্ষেত্রে দায়িত্ব গ্রহণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার থাকবে একমাত্র মৃন্ময়ী তোকদারের (মায়ের নাম প্রয়াত প্রতিমা তোকদার, বাবার নাম দেবব্রত তোকদার)। অন্য কারোর কোনো অধিকার থাকবে না এইসব বিষয় ও ক্ষেত্রে।’

মরণোত্তর দেহদান ও মৃত্যুর পর সব সৃষ্টি ধ্বংস প্রসঙ্গে কবির সুমন লিখেছেন, ‘আমার মৃতদেহ যেন দান করা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে। কোনো স্মরণসভা, শোকসভা, প্রার্থনাসভা যেন না হয়। আমার সমস্ত পাণ্ডুলিপি, গান, রচনা, স্বরলিপি, রেকর্ডিং, হার্ডডিস্ক, পেনড্রাইভ, লেখার খাতা, প্রিন্ট আউট যেন কলকাতা পুরসভার গাড়ি ডেকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেগুলো ধ্বংস করার জন্য; হাতে লেখা সবকিছু, অডিও এবং ভিডিও ফাইল, আমার কোনোকিছু যেন আমার মৃত্যুর পর পড়ে না থাকে। আমার ব্যবহার করা সব যন্ত্র, বাজনা, সরঞ্জাম যেন ধ্বংস করা হয়। এর অন্যথা হবে আমার অপমান।’

কবির সুমনের ইচ্ছাপত্র । ছবি : ফেসবুক থেকে

এই ইচ্ছাপত্র প্রসঙ্গে কবির সুমন ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, ‘খুব জরুরি বিষয়। আবেগহীনভাবে সকলকে জানিয়ে রাখছি, কারণ হঠাৎ কিছু ঘটে গেলে কঠিন সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় অনুরূপ একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল ২০১২ সালে আমি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর। খোলাখুলি সকলকে জানিয়ে রাখছি। অনুগ্রহ করে মতামত দেবেন না। ভালো-মন্দ কিছু লিখবেন না। এটা এক প্রবীণ মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি। অনেক অভিজ্ঞতার পর, অনেক ভেবেচিন্তে লিখছি। ফেসবুকে, যাতে অনেকেই এটা জেনে যান। অনুগ্রহ করে আবেগের বশবর্তী হবেন না, উপদেশ পরামর্শ দেবেন না। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, যাবো। আমার জীবনে কোনো হতাশা, দুঃখ, ব্যর্থতাবোধ, অবসাদ নেই। আমি সানন্দে বেঁচে আছি, আমার কাজ করে যাচ্ছি। আমার জীবনে ভালোবাসা কামনা কাম লালসা আনন্দ স্ফুর্তি মজা রঙ্গরগড় হাসাহাসি নিভৃত কান্না কাজ অধ্যবসায় নিয়মিত রেয়াজ পরিশ্রম সৃজনশীলতা সবই আছে।’

কবির সুমন আরো লিখেছেন, “প্রয়াত খুশওয়ান্ত সিং তাঁর ‘দ্য এন্ড অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘কাজই ধর্ম’। আমি তাই-ই মনে করি। আমার ধর্ম কাজ। প্রতিনিয়ত আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, অর্থাৎ স্বধর্ম পালন করছি। আমি জানি আমি সানন্দে, খুশি মনে মারা যাবো। আমি বেঁচে আছি বাংলা খেয়াল, বাংলা গান সুরতালছন্দলয়, আমার স্বভাবসিদ্ধ ভালোবাসা কাম কামনা খামখেয়ালিপনা inconsistency এক ধরনের ক্ষ্যাপামি আর সুরতাললয়ে থেকে মৃত্যুর অপেক্ষায়। অন্য কোনো বিষয়ে আমি নেই।”

কবির সুমন ১৯৯২ সালে ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের মাধ্যমে বাংলা গানে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তাঁর গানে প্রকাশ পেয়েছে বিপ্লব আর প্রেম। বাংলাদেশেও তুমুল জনপ্রিয় কবির সুমন। সবশেষ বাংলাদেশের ‘প্রীতিলতা’ শিরোনামে একটি সিনেমায় কণ্ঠ দিয়েছনে এই শিল্পী।

সৃষ্টি ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *